ওজোন স্তর ক্ষয়ে হুমকিতে জনস্বাস্থ্য- Dhaka Mail

ওজোন স্তরে ছিদ্র বা ক্ষয়ের আকার দিনে দিনে বাড়ছে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি এসে পৌঁছাচ্ছে পৃথিবীতে। যার প্রভাবে আশঙ্কাজনকভাবে পৃথিবীতে বাড়ছে উষ্ণতা। সেই সাথে হুমকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি মানবদেহের ত্বক এমনকি হাড়ের ক্যানসারসহ অন্যান্য মারাত্মক রোগ বাড়ছে।

ওজোন স্তর হচ্ছে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের একটি স্তর, যেখানে তুলনামূলকভাবে বেশি মাত্রায় ওজোন গ্যাস থাকে। অক্সিজেনের একটি রূপই হচ্ছে ওজোন। যা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ওজোন স্তর শোষণ করে নেয়। যার ফলে পৃথিবীতে সূর্যের এ অতিবেগুনি রশ্মি আসতে পারে না। উদ্ভিদসহ প্রাণিজগত বেঁচে থাকে পৃথিবীতে।

ওজোন স্তরের ক্ষয় ও তার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী গণসচেতনতা তৈরিতে প্রতি বছর ১৬ সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক ওজোন দিবস হিসেবে পালন করা হয়। বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ১৯৮৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরে বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর ক্ষয়ের জন্য দায়ী দ্রব্যগুলো ব্যবহার নিষিদ্ধ বা সীমিত করার জন্য ভিয়েনা কনভেনশনের আওতায় ওজোন স্তর ধ্বংসকারী পদার্থের ওপর মন্ট্রিল প্রটোকল গৃহীত হয়। এই দিনটিতেই পালিত হয় বিশ্ব ওজোন দিবস বা আন্তর্জাতিক ওজোন স্তর রক্ষা দিবস। বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে এই মন্ট্রিল প্রটোকলে স্বাক্ষর করে। এরপর থেকে বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হয়।

এ বিষয়ে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. গুলশান আরা লতিফা উদ্ভিদ, প্রাণী ও পরিবেশ উপর ওজোন স্তরের ক্ষয় ও অতি বেগুনী রশ্মির বিরূপ প্রভাব তুলে ধরে বলেন, ওজোন স্তর ক্ষয় রোধে মন্ট্রিল প্রোটোকল ও ইইউ রেগুলেশন মান্য করার বিকল্প নেই। এর মাধ্যমেই ওজোন স্তর ক্ষয়ের প্রতিকার করা সম্ভব।

বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, বায়ূমণ্ডলের ওজোন স্তর আমাদের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এটি ক্ষতিগ্রস্থ হলে মানুষ, উদ্ভিদ, প্রাণী তথা পরিবেশ প্রতিবেশ উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। 
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড চেয়ারম্যান ফাতিনাজ ফিরোজ বলেন, আমাদের জীবনের জন্য ওজোন স্তর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বব্যাপী সহযোগিতাই পারে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব রক্ষা করতে। এক্ষেত্রে যুবকদেকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা ধনীরাই মূলত পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী। আমরা বাসা, অফিস ও গাড়িতে শীতাতপ যন্ত্র ব্যবহার করি। যা হতে CFC গ্যাস নির্গত হয় ফলে ওজোন স্তরের ক্ষতি হয়।

সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোওয়ারী বলেন, ঢাকার বায়ু দূষণ মাঝে মধ্যে মহামারি পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ সময় ঘর থেকে বের হওয়া উচিত নয়। গ্লোবাল ওয়ার্ড কমিউনিটি জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কার্যকরী কোনো কাজই করছে না। অন্যদিকে নাগরিকরাও পরিবেশ নিয়ে সচেতন নয়। যার প্রভাবে আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশে কিডনী রোগী হবে  ৫০ লাখ। 

শামীম হায়দার পাটোওয়ারী বলেন, আমরা সবসময় পরিবেশ মহামারির মধ্যে বসবাস করছি। পরিবেশ দূষণ কমানোর জন্য দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে আমরা সোচ্চার নই। সরকারি এবং বেসরকারি উভয় পক্ষই বৈশ্বিক উন্নত দেশের দূষণকারী থেকে আমারা ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারছি না। স্থানীয়ভাবে আমরা যে পরিমাণ দূষণ করছি তা ধারনার বাহিরে। আমাদের দেশে রোগীর সংখ্যা বিশেষভাবে ক্যান্সার এবং কিডনী রোগী বাড়ছে। দেশে কিডনী রোগী বাড়লে এত রোগীর ডায়ালাইসিস চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা করা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। এই রকম দূরারোগ্য অনেক ব্যাধি বাড়ছে যা আমাদের পরিবেশ দূষণের ফল।
 

Source: দেলাওয়ার হোসাইন দোলন | Dhaka Mail