খুবিতে আন্তর্জাতিক বন দিবস উদযাপন

বন সংরক্ষণের অঙ্গীকার, টেকসই উৎপাদন ও ব্যবহার প্রতিপাদ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক বন দিবস ২০২২ পালন করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ফরেস্ট্রি ও উড টেকনোলজি (ফউটে) ডিসিপ্লিন। বিশ্বব্যাপী বনের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ২০১২ সাল থেকে দিবসটি পালিত হচ্ছে।

সোমবার (২১ মার্চ) সকাল সাড়ে দশটায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি বর্ণাঢ্য র‍্যালির মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। ক্যাম্পাসের হাদি চত্বর থেকে শুরু হয়ে শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে দিয়ে ঘুরে হাদি চত্ত্বরে এসে র‍্যালিটি শেষ হয়। র‍্যালি শেষে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসেনে আরা ও ফউটে ডিসিপ্লিনের শিক্ষক প্রফেসর এ কে ফজলুল হক।

পরে সকাল সাড়ে এগারোটায় বন দিবস উপলক্ষে ৩ মিনিট বক্তৃতা প্রতিযোগিতা ও দুপুর বারোটায় একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসেনে আরা বলেন, গাছ যেমন করে একসঙ্গে আমাদেরকে তাদের অক্সিজেন দিয়ে, তাদের কাঠ দিয়ে, তাদের পাতা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখে তেমনিভাবে আমাদের একতাবদ্ধভাবে গাছকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

গাছ আমাদের বেঁচে থাকার জন্য হার্ট স্বরূপ। গাছকে ভালোবাসা প্রকৃতিকে ভালোবাসা এবং প্রকৃতিকে উপলব্ধি করা মানব জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। গাছ আমাদের প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করছে। আজকের এই ইন্টারন্যাশনাল ডে অফ ফরেস্টে যেন আমাদের এই অঙ্গীকার হয় আমরা সবাই মিলে গাছকে রক্ষা করবো, গাছ রোপণ করবো এবং তার পরিচর্যা করবো। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস; বন সংরক্ষক খুলনা সার্কেল মিহির কুমার দো এবং ইউএস ফরেস্ট সার্ভিস কর্তৃক বাস্তবায়িত কম্পাস প্রোগ্রামের হিউমান রিসোর্সেস এন্ড এডমিনিস্ট্রেটিভ ম্যানেজার মোসাম্মাৎ শারমিন খানম। অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফউটে ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মো: গোলাম রাক্কিবু। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একই ডিসিপ্লিনের প্রধান অধ্যাপক ড. মো: ওয়াসিউল ইসলাম। অনুষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন উক্ত ডিসিপ্লিনের প্রধান অধ্যাপক ড. মো: ইফতেখার শামস।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস বলেন, আমরা সবাই বুঝি বনের কী গুরুত্ব, গাছের কী গুরুত্ব। আমাদের জীবনে কাঠের বহুল ব্যবহার উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন আমরা কাঠের পরিবর্তে বিকল্প হিসেবে প্লাস্টিক ব্যবহার করি। এটা আমাদের জন্য স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী তা ভাবার বিষয়। কাঠের গুরুত্ব কাঠই একমাত্র বহন করে। কাঠের কোনো বিকল্প নেই।

তিনি আরো বলেন, সুন্দরবন আমাদের ন্যাচারাল প্রটেক্টর হিসেবে কাজ করে। ঝড় ঝঞ্ঝা থেকে আমাদের আগলিয়ে রাখে।

পৃথিবীর ১.৬ বিলিয়ন মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বনের উপর নির্ভর করে। সুতরাং বন সংরক্ষণের গুরুত্ব অপরিসীম। এ ব্যাপারে আমাদের জনগণের মধ্যে সচেতনতা আনতে হবে। বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন। সবার মধ্যে সচেতনতা আসলে আমরা আশাকরি- আমাদের দেশ বন সংরক্ষণে এগিয়ে যাবে।

এছাড়াও বিশেষ অতিথি মিহির কুমার দো বন সংরক্ষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, বন সংরক্ষণে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া কোন বনই সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। সুন্দরবন ও অন্যান্য বনগুলোতে জনগণকে সম্পৃক্ত করে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমাদের মত জনবহুল দেশে বন সংরক্ষণ একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। বন রক্ষার জন্য স্থানীয় জনগণের সহায়তার সাথে রাজনৈতিক কমিটমেন্টরও প্রয়োজন আছে। সবার যদি সদিচ্ছা থাকে তাহলে বন সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।

৩ মিনিট বক্তৃতা প্রতিযোগিতা, সেমিনার, ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, ইত্যাদি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষকগণ ও সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণ। বন পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাতাসংস্থা ইউএসএইডের অর্থায়নে ও ইউএস ফরেস্ট সার্ভিস এর কমিউনিটি পার্টনারশিপ টু স্ট্রেংদেন সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট (কম্পাস) প্রোগ্রাম এর সহযোগিতায় দিবসটি পালিত হয়।